শিশুর রুচি - অরুচি ও করনীয়
- Published: 28-Mar-2023
- Posted: Dr Md Omar Faruk
- Category: শিশুচিকিৎসা
বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকা মানেই প্রায় নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়, তাকে খাওয়াতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় মা-বাবা ও বাড়ির লোকজনের। ছোটাছুটি, হুড়োহুড়ি, কান্নাকাটি তো যেন রোজকার বিষয়। তারপরও অনেক শিশুর খাবারের প্রতি প্রচুর অনীহা দেখা যায়। মা-বাবারা পড়ে যান ভীষণ দুশ্চিন্তায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চা খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবেন না, ক্ষুধা লাগলে নিজেই খেতে চাইবে। অনেক মা-বাবার আবার এ নিয়ে আছে প্রশ্ন- খালি পেটে থেকেও যদি খেতে না চায়, জোর করা ছাড়া উপায় কী?
আসলে কোনটি সঠিক?
যে ক'টি কারণে শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা জন্মায়?
প্রধান কারনগুলো হচ্ছে--
১। জোর করে ঠেসে খাওয়ালে ।
২। একই ধরনের খাবার বারবার দিলে ।
৩। পেছনে পেছনে খাবার নিয়ে ছোটাছুটি করলে ।
৪। এ ছাড়াও বাচ্চার মুখে বা জিহবায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন ।
৫। নিয়মিত কৃমির ওষুধ না দেওয়া এবং কৃমির প্রভাব ।
মুখরোচক বিভিন্ন খাবার যেমন-
চকলেট, চিপস, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি রুচি নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। এ কারণগুলো জানা থাকলে সহজেই প্রতিকার করা সম্ভব।
করনীয়ঃ
এক খাবার নিয়ে বাচ্চার পেছনে আধাঘণ্টার বেশি সময় লেগে থেকে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে বাচ্চার আগ্রহ চলে যায়। এ ছাড়াও বাচ্চাকে প্রতিদিন খাবার পরিবর্তন করে দিতে পারেন। যেমন- এক দিন ভাত, এক দিন খিচুড়ি, অন্য আরেক দিন পোলাও। এতে তার টেস্টবাড ভিন্নরকম স্বাদে অভ্যস্ত হবে, সে খেতে বিরক্ত বোধ করবে না। কৃমির কারণে অনেক সময় এমন হয়। তাই বাড়ির সবাই নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাবেন। যাতে শিশুটিও খায়।
পরামর্শঃ
শিশুর ওজন সম্পর্কে নিয়মিত ধারণা রাখুন। যদি তার ওজন বয়সের হিসাবে ঠিক থাকে, তবে তার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, যে কারণে সে খাচ্ছে না। এ নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই। এটি একান্তই তার মনের খেয়াল। একেবারে ছোট শিশুরা মায়ের বুকের দুধেই অভ্যস্ত। সে যদি বোতলে করে কৌটার দুধ খেতে না চায়, তবে বুঝে নিতে হবে সে বুকের দুধের অভাব বোধ করছে। আবার অনেক সময় মুখে ঘা হলেও ছোট বাচ্চারা খেতে চায় না। বেশি ছোট বলে তারা বলতে পারে না।
শিশুকে প্রধান তিন বেলার খাবারের কিছুক্ষণ আগে অবধি কিছু খাওয়াবেন না। এতে তার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যাবে। একই ধরনের খাবার বারবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে বাচ্চারা বিরক্ত হয় এবং খাবারে তাদের রুচি চলে যায়। বিভিন্ন রঙের সবজি মিশিয়ে খাবারকে রঙিন বানিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। আগের যুগে শিশুদের ফুল তোলা থালায় ভাত খেতে দেওয়ার বেশ প্রচলন ছিল। তার প্রিয় কার্টুন আঁকা থালায় খাবার পরিবেশন করতে পারেন।
এতে সে বেশি আকৃষ্ট হবে। ছোট বাচ্চা জেদি হলেই যে তাকে চকলেট, চিপস এগুলো কিনে দিতে হবে তার কোনো মানে নেই। তাদের ছোট পেটে অনেক খাবার একসঙ্গে আঁটে না। আর এসব খেয়ে অধিকাংশ সময়েই মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তারা প্রধান খাবার খেতে চায় না। অথচ এ খাবারগুলোই তাদের শরীরে শক্তির জোগান দেয়।
অনেক সময় মা-বাবার উদাসীনতা ও পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারায় খেতে চায় না। দেখা যায়, বাচ্চাটি একা একা খেলে যতটা খাবার খায়, তার চেয়ে বেশি খায় যদি মা-বাবা বা পরিবারের সবার সঙ্গে একসঙ্গে বসে খেতে পারে। বাচ্চা যখন বসতে শিখবে, তখন থেকে তাকে ছোট একটি মগ ও থালা দিন, যাতে সে সবার সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাওয়ার আগ্রহ বোধ করে। খাওয়ানোর সময় তার সঙ্গে থাকুন।
শিশুটি যদি তার বয়সী অন্যান্য শিশুর মতো সচল না হয়, তবে অধিকাংশ সময়েই শিশুটি রক্তশূন্যতা ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অনেক সময় মানসিক চাপ বা তীব্র কোনো ভয়ও শিশুর খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আসল কারণটি খুঁজে বের করুন। দরকার হলে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন । খাওয়ার প্রতি শিশুর অরুচি অতি সাধারন বিষয় এই নিয়ে এত চিন্তার কিছুই নেই!